সাম্প্রতিক কালে যে সকল রাজনৈতিক ঘটনা-পরিবর্তন বাংলাদেশে আমরা লক্ষ্য করছি, তার একটি বড় অংশ আবর্তিত হচ্ছে সরকারের করা সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনীকে ঘিরে।  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, রাষ্ট্রধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আরও কিছু মৌলিক পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে যে দূরত্ব ও আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় আসছে একের পর এক কর্মসূচী এবং হরতাল।  এগুলো বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও এতে সরকার যে অসহিষ্ণু অবস্থান নিয়েছে, তাতে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে যার ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের সাধারণ মানুষ।  সামগ্রিক অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সম্প্রতি আনা সংশোধনীর ভিত্তিতে সরকার এবার সাংবিধানিক ভাবেই দেশের বিরোধী দলগুলোকে নিস্ক্রিয় করতে তৎপর হয়ে উঠেছে, যার প্রথম বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মধ্য দিয়ে।  আগামী দিনগুলোতে আরেকটি স্পর্শকাতর ইস্যু সামনে আনতে পারে সরকার, যার মাধ্যমে দেশের বিরোধীদলের একটি প্রভাবশালী অংশ – ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনীতি করবার অধিকার থেকে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবেই বঞ্চিত হতে পারে।  যুদ্ধাপরয়াধীদের ফাসির দাবীতে শুরু হওয়া শাহবাগ আন্দোলন থেকেও এধরণের দাবী তোলা হয়েছে।  যদি সরকার কোন পদক্ষেপ নিয়েই ফেলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করবার ক্ষেত্রে, তাহলে সে ধরণের পরিবর্তিত পরিস্থিতি দেশের ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক আবহাওয়াকে আরও ঘোলাটে করে তুলবে, এ বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই।

রাজনীতি করবার সাংবিধানিক অধিকার

বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবার অধিকারটি সংবিধানস্বীকৃত।  আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪১(১)(ক) তে বলা হচ্ছে – আইন, জনশৃংখলা ও নৈতিকতার সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যেকোন ধর্ম ‘অবলম্বন, পালন ও প্রচারের’ অধিকার রয়েছে।  বিশ্বের প্রায় সকল দেশের সংবিধানেই নাগরিকদের এ অধিকারটি দেয়া হয়েছে।  তবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের বিষয়টি যদি ধর্ম পালনেরই একটি অংশ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অবস্থান কি হবে সে ধরণের বিধান আমরা সংবিধানে পাই না।  রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ বা রাজনীতি ইসলাম বা অন্য কোন ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ কি না ও বিষয়ে কারো কারো দ্বিমত থাকলেও বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় নব্বইটিরও বেশি দেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলো রাজনীতি করে যাচ্ছে, কেউ কেউ ক্ষমতাও লাভ করছে।

মূলত পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রীম কোর্টের রায় আসবার পরই বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মূল ধারাটি তৈরি হয়।  শাহবাগ আন্দোলনে তা আরো প্রাণ পায়।  ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্মভিত্তিক দল বলতেই ইসলামী দল বোঝানো হয়, কেননা এখন পযন্ত অন্য কোন ধর্মভিত্তিক দল সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেনি। ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার রাজনৈতিক সংস্কারের সময় ২০০৮ সালে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, যার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের স্বার্থেই কিছু কিছু ইসলামী দল তাদের গঠণতন্ত্র সংশোধন করে নেয়।  বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অবস্থান ও সাংবিধানিক বৈধতা খুঁজে পাবার জন্য আমাদের একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হবে।

স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলো দেশের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিত, সত্তরের নির্বাচনেও তাদের অংশগ্রহণ ছিল।  তবে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে সামাজিক, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক যে কারণেই হোক না কেন তৎকালীন ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রায় সবাই এই সংগ্রামের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, যার ফলশ্রুতিতে স্বাধীন বাংলাদেশে তারা রাজনীতি করবার অধিকার হারিয়ে ফেলে।  বাহাত্তরের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৮ এ সংগঠনের স্বাধীনতা সম্পর্কে বলা ছিল, ‘জনশৃংখলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠনের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।  তবে শর্ত থাকে যে, কেন ব্যক্তিরই এমন কোন সংগঠন গঠন করবার, সদস্য হবার কিংবা কোন কার্যক্রমে অংশ নেবার অধিকার থাকবে না যদি ঐ সংগঠনটি সাম্প্রদায়িক হয় অথবা কোন ধর্ম বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যকে ভিত্তি করে কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য গঠিত হয়। ’ এর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হয়ে যায়।  ১৯৭৫ সালে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে একটি আদেশের মাধ্যমে অনুচ্ছেদ ৩৮ এর ঐ শর্তাংশটুকু বাতিল করে দেন, পরবর্তীতে যা ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সাংবিধানিক বৈধতা পায়।  অর্থাৎ, পঞ্চম সংশোধনীর পর অনুচ্ছেদ ৩৮ দাঁড়ায় – ‘জনশৃংখলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠনের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। ’ এর মাধ্যমে সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞাটি উঠে যাওয়ায় ইসলামী দলগুলো তাদের কার্যক্রম আবার শুরু করে।  একে একে পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করে এবং ৩১ বছর পর ২০১০ সালে যখন আদালতের রায়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়ে যায়, তখনই বিভিন্ন পর্যায় থেকে ধর্মভিত্তিক দলের রাজনীতি করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আসতে শুরু করে।  সর্বশেষে, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে কিছু নতুন শর্তাবলী যুক্ত করা হয়, যার মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের মত স্পষ্টভাবে না বললেও সরকারের হাতে ধর্মভিত্তিক দলের রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করবার কিংবা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে রাখবার এখতিয়ার চলে আসে।  সর্বশেষ সংশোধনীর আলোকে ৩৮ অনুচ্ছেদটি যা দাঁড়ায় – ‘জনশৃংখলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠনের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তিরই উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ করার অধিকার থাকবে না, যদি – (১) তা নাগরিকদের মাঝে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়।  (২) তা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করতে গঠিত হয়।  (৩) তা রাষ্ট্র বা নাগরিক কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়  (৪) তার গঠন এবং উদ্দেশ্য এ সংবিধানের পরিপন্থী হয়। ’ অর্থাৎ, স্পষ্ট ভাবে না বললেও এ অনুচ্ছেদের আওতায় সরকার এখন ইসলামী দলগুলোর উপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, কেননা বাংলাদেশের সংবিধান এখন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ চরিত্রের, ধর্মভিত্তিক দলের গঠণতন্ত্র ও কার্যক্রমের সাথে বহু জায়গাতেই এটি সাংঘর্ষিক।

ধর্মনিরপেক্ষতার সাংবিধানিক সংজ্ঞা আমরা পাই বাহাত্তরের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২ তে, যেটিকে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছিল এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ঈষৎ পরিবর্তিতভাবে পুনর্জীবিত করা হয়েছে।  এখানে বলা হয়েছে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা বাস্তবায়নের জন্য – (১) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (২) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান, (৩) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার এবং (৪) বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার উপর নিপীড়ন – বিলোপ করা হবে। ’ এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, এখানে রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান বিলোপ করা হবে বলা হচ্ছে, আবার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও সমর্মাদায় অন্য ধর্মগুলো বহাল রাখা হচ্ছে।  বিষয়টি পরস্পরবিরোধী কি না সেদিকে আমরা না গেলেও অনুচ্ছেদের ৩য় শর্তটি, অর্থাৎ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার বিলোপ করা’ – ইসলামী দলগুলোর জন্য মাথাব্যাথার বড় একটি কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, কেননা ‘ধর্মের অপব্যবহার’ কি, কিভাবে হয় বা কতটুকুতে হয় এ বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য কোথাও নেই, সুতরাং সরকার চাইলে সুবিধামত সংজ্ঞা নির্ধারণ করে তা ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে।  এছাড়াও অনুচ্ছেদ ৮ এ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এর বদলে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ প্রতিস্থাপনও ইসলামী দলগুলোর জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন অনেকে, কারণ যে কোন আইন প্রনয়ণের সময় তাতে এ মূলনীতিগুলোর প্রতিফলন ঘটে থাকে।

রাজনৈতিক দল কি সংবিধানের দৃষ্টিতে একটি “সংগঠন” ?

অনেকেই মনে করেন, অনুচ্ছেদ ৩৮ এর কার্যকারিতার আওতায় রাজনৈতিক দল পড়বে না।  কেননা ৩৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সমিতি বা সংঘের কথা (Associations & Organizations), কিন্তু ১৫২ অনুচ্ছেদে রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, এটি হল অধিসংঘ বা ব্যক্তিসমষ্টি (Group or Combination of Persons)।  গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (RPO 1972) অবশ্য সংবিধানের ১৫২(১) এর দেয়া সংজ্ঞাটিই স্বীকৃতি দিয়েছে।  তাই তাদের মতে ঐ অনুচ্ছেদের অধীনে রাজনৈতিক দল পড়বে না বরং অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন, যেমন খতমে নবুওয়াত আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম, উলামা মাশায়েখ পরিষদ বা হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ এর আওতাভুক্ত হবে।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণে জার্মানী, আলজেরিয়া, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা. স্পেন, আর্জেন্টিনা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবিধানে ‘সংগঠনের অধিকার’ দেয়ার পাশাপাশি আলাদাভাবে ‘রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার’ দেয়া আছে।  তুরস্কের সংবিধানে অত্যন্ত বিশদভাবে রাজনৈতিক দল গঠনের শর্তাবলী আলোচনা করা আছে।  তাই ঐ সকল গবেষকের দৃষ্টিভঙ্গি হল, ৩৮ অনুচ্ছেদের আলোকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা যাবে না, বরং অনুচ্ছেদ ১২ দিয়েই তা করা যেতে পারে।  তবে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মত ভারত, পাকিস্তানসহ আরও অনেক দেশের সংবিধানেই ‘সংগঠন’ এর মধ্যে রাজনৈতিক দলকেও গণ্য করা হয়।  যুক্তরাষ্ট্রের একটি মামলার রায়েও (ন্যাশন্যাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ কালারড পিপল বনাম আলাবামা) এটিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।  পাকিস্তানে অপর একটি মামলার রায়ে (প্রোগ্রেস অফ পাকিস্তান কোং লিমিটেড বনাম রেজিস্ট্রার, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ, ১৯৫৮) রাজনৈতিক দলকে তো বটেই এমনকি ব্যবসায়িক ফার্ম-কোম্পানীকেও সংবিধানে প্রদত্ত সংগঠনের সংজ্ঞার আওতাভুক্ত বলা হয়েছে।  তাই সরকার প্রয়োজন মনে করলে অনুচ্ছেদ ৩৮ এর আলোকেই যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনঃ আইনী কাঠামো

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য যে আইনটি অনুসরণ করা হয় তা হল গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২।  তবে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশের সার্বিক রাজনীতিতে একটি ব্যাপক পুনর্বিন্যাস আনার লক্ষ্যে তৎকালীন রাষট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদ ২০০৮ এর ১৯শে অগাস্ট জারী করেন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স, ২০০৮।  এখানে বাহাত্তর সালের আইনটিতে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা হয় যার ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হয়ে যায়, বাহাত্তরের আইনে যা ছিল ঐচ্ছিক।

এ অর্ডিন্যান্সের ৯০(গ) ধারাতে দলগুলোর নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কিছু নতুন শর্ত দেয়া হয়, যেগুলো হল – ‘কোন রাজনৈতিক দল রেজিস্ট্রেশন পাবে না যদি, (১) দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, (২) দলটিতে ধর্ম, গোষ্ঠী, ভাষা, বর্ণ প্রভৃতির মধ্যে কোন বৈষম্য করা হয়, (৩) নাম, পতাকা, চিহ্ন বা অন্য কোন কার্যক্রমে যদি সাম্প্রদায়িক শান্তি বিঘ্নিত হবার বা দেশের সার্বভৌমত্বহানিকর কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকে, (৪) যদি এর গঠণতন্ত্রে বাংলাদেশের বাইরেও কোন শাখা বা কমিটি করবার অনুমোদন দেয়া থাকে। ’ এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয়টি হল, এ অর্ডিন্যান্সের আলোকে রেজিস্ট্রেশন পাবার জন্য ২০০৮ সালে ইসলামী দলগুলো তাদের সংবিধানে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসতে বাধ্য হয়, যার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য ছিল নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, অন্য ধর্মের লোকদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি এবং ক্ষেত্রবিশেষে নাম পরিবর্তন।  তবে ৯০(গ) ধারার প্রথম শর্তটি তখন পর্যন্ত দলগুলোর গঠনতন্ত্রে কোন প্রভাব না ফেললেও বর্তমানে সংশোধিত ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আলোকে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।  এছাড়াও অর্ডিন্যান্সের ৯০(জ) ধারায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন বাতিলের কিছু শর্ত উল্ল্যেখ আছে, যার মধ্যে ১(খ) উপধারায় অন্যতম কারণ হিসেবে রয়েছে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়া।

আমাদের দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত মোট ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১১টি ইসলামী দল রয়েছে, এদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সর্বপ্রথম নিবন্ধিত ইসলামী দল, যারা ২০০৮ এর চৌঠা নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়।  দেশের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণের হিসাব করলে দেখা যায়, ১৯৭৩ এর প্রথম নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ থাকায় জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি।  ১৯৭৮ সালে কার্যক্রম শুরু করবার পর ১৯৮৬ এর নির্বাচনে দশটি আসন লাভ করে জামায়াত।  ১৯৯১ এর নির্বাচনে ১৮টি আসন লাভ করবার পর ১৯৯৬তে তা নেমে আসে ৩টি আসনে।  এরপর ২০০১ এর নির্বাচনে ১৮টি আসন পেলেও সর্বশেষ ২০০৮ এ জামায়াত পায় মাত্র দু’টি আসন।  অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর নির্বাচনে চোখে পড়বার মত কোন তৎপরতা এখনও পরিলক্ষিত হয়নি।

ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সুলুক সন্ধান

বাংলাদেশে কার্যকর ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আলোচনার স্বার্থে সবচেয়ে বড় দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠণতন্ত্র আমরা বিশ্লেষণ করছি, আসুন দেখা যাক এতে কি রয়েছে।

জামায়াতের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া অক্টোবর, ২০০৮ পর্যন্ত সংশোধিত গঠণতন্ত্রের মৌলিক আকীদা, ধারা ২(৫) এ বলা হয়েছে, “মানুষ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে মানিয়া লইবে না।  কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিয়া লইবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য এবং তাহার দেয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে। ” এছাড়া সংগঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বর্ণনায় ধারা ৩(৩) এ বলা হয়েছে, “সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের আদর্শ সমুন্নত রাখা এবং ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তার বিধান এবং সর্ব শ্রেণীর মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সম্পদের সুষম বন্টন, জাতীয় আয় ও উৎপাদন বৃদ্ধি, মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে শোষণ, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। ” এছাড়াও ধারা ৩(৪) এ বলা হচ্ছে, “ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। ”

সাদা চোখে এ সকল প্রবিধাণ একটি ইসলামী দলের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য হলেও সাংবিধানিক সংজ্ঞার ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণে দেখতে গেলে এই প্রবিধানগুলো বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের প্রস্তাবনা (preamble) ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিকে লংঘন করে।  এছাড়াও  জামায়াতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যতে বলা শর্তগুলো ক’দিন আগ পর্যন্তও সংবিধানের ৮(১), ৮(১)(ক) এবং ২৫(২) অনুচ্ছেদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, বর্তমানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা পরিবর্তিত হয়ে গেছে (সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের বদলে ধর্মনিরপক্ষতা আনা হয়েছে এবং মুসলিম দেশগুলোর সাথে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপনের বিধান বাতিল করা হয়েছে)।  তাই ঐ প্রবিধানগুলোকেও বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলা যেতে পারে।  মোটামুটি একই ধরণের শর্তাবলী অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সংবিধানেও পাওয়া যাবে, সুতরাং সরকার এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করতে পারে।

ধর্মভিত্তিক বা ধর্মীয় নামধারী রাজনৈতিক দল – বিশ্বজুড়ে

দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আমরা যদি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম দেখতে বিশ্বব্যাপী চোখ রাখি, তাহলে আমাদের জন্য বিস্ময় অপেক্ষা করবে।  বিশ্বের প্রায় আশিটি দেশে একশ সত্তরটি খ্রিষ্টান ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছে।  ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কিংবা ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যালিস্ট পার্টি – এ ধরণের নাম দিয়েই ভিন্ন ভিন্ন দেশে দলগুলো কাজ করে চলেছে।  জার্মানীতে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের নেতৃত্বাধীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এখন ক্ষমতায়।  নেদারল্যান্ডস, আর্জেন্টিনা সহ বিশ্বের আরও বিভিন্ন দেশে এ ধরণের দল ক্ষমতায় রয়েছে।  বিভিন্ন দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবেও তৎপর রয়েছে তারা।  তবে নামে ক্রিশ্চিয়ান দল হলেও দলগুলো তাদের রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক মূলনীতি অনুসরণ করে চলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হল সেক্যুলারিজম (এর কারণ হিসেবে বলা যায়, খ্রিস্টান ধর্মে রাজনীতি বা রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের উপর কোন সুনির্দিষ্ট গুরুত্বারোপ করা নেই)।  অপরদিকে মুসলিম দেশগুলোতে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অবস্থা চোখে পড়বার মত।  ৩০ টি দেশে প্রায় ৭৯টি ইসলামী দল বর্তমান বিশ্বে গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।  তবে মুসলিমপ্রধাণ দেশগুলোর মধ্যে সাংবিধানিক ভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে মূলত চারটি দেশে – মিসর, তুরস্ক, আলজেরিয়া এবং তিউনিসিয়া।  এছাড়াও সাবেক ফরাসী কলোনীভুক্ত পশ্চিম আফ্রিকার কিছু দেশেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ (কারণ, ফ্রান্সে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ)। তবে বেশিরভাগ দেশগুলোর সংবিধানে সুস্পষ্ট কিছু বলা না থাকলেও রাজনৈতিক দলের বৈধতার জন্য প্রচলিত আইন, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়েছে।

এবার আসুন দেখা যাক রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন ও কার্যক্রম পরিচালনার একটি দৃশ্যপট।  আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে সামরিক জান্তা প্রণীত আইনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের উদ্দেশ্যে কোন দল নিবন্ধন পাবে না।  ভারতের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫২ এর ২৯(ক) ধারার ৫ম উপধারা অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য প্রতিটি দলকে অবশ্যই তার গঠণতন্ত্রে এ অনুচ্ছেদটি যোগ করতে হবে যেখানে বলা হয়েছে, “এ দলটি ভারতের সংবিধান ও সকল আইনের প্রতি এবং সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রের মূলনীতিসমূহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস ধারণ করবে এবং ভারতের সার্বভ্যেমত্ব, ঐক্য এবং উন্নতি নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবে। ” তবে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়াসহ আরো বেশকিছু দেশে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে সাংগঠনিক দৃঢ়তা এবং অর্থনৈতিক স্বচ্ছতাকেই মূল বিবেচ্য হিসেবে দেখা হয়, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সম্পর্কে কোন আলাদা বিধিনিষেধ সেখানে আরোপিত নেই যদি না তা দেশের সার্বভৌমত্ব হানিকর কোন উদ্দেশ্যে গঠিত হয়।

শেষ কথা

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক করা পরিবেশকে আরও ঘোলাটে করে তুলতে পারে।  ১/১১ এর তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি ও সুশীল সমাজের সদস্যেরা নির্বাচন কমিশনের কাছে এ ধরণের আহবান জানিয়েছিল।  তখন নিবন্ধনের কিছুটা বাধ্যবাধকতা আরোপ করা ছাড়া নির্বাচন কমিশন আর কোন পদক্ষেপ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর উপর গ্রহণ করেনি।  নব্বই ভাগ মুসলমানের এই দেশে ধর্মান্ধতা-জঙ্গীবাদ যেমন তীব্র ঘৃণার সাথে দেখা হয়ে থাকে, তেমনি ধর্মভিত্তিক দলগুলোর প্রতিও দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠীর নৈতিক এবং সরাসরি সমর্থণ রয়েছে।  সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে যদি এই দলগুলোর উপর কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ সরকার আরোপ করতে চয়, তাহলে তা একদিকে যেমন একটি চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করবে, তেমনিভাবে এ ধরণের অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে দেশি-বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহলের সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গীবাদে মদদ দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে নিয়ে যাবার সুযোগও সৃষ্টি করে দিবে।  দেশের লাখো-কোটি খেটে খাওয়া মানুষের স্বপ্ন এবং স্বর্ণালী আগামীর প্রেরণা বুকে নিয়ে পথ চলা তরুণ-যুবসমাজের অমিত সম্ভাবনাময় এই দেশ নিয়ে এ ধরণের কোন পরিস্থিতির উদ্ভব আমাদের কারোই কাম্য নয়।  তবে, যদি সরকার এ ধরণের কোন পদক্ষেপ নিতে চেষ্টা করেই থাকে, তাহলে অস্তিত্বের স্বার্থে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে তা মোকাবেলা করবার উদ্যোগ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর বুদ্ধিজীবি মহলকে এখনই নিতে হবে, হতে পারে কোন বিকল্প ফর্মূলায় যাবার মাধ্যমে, বা আলোচনা করে একটি সমঝোতায় আসার মাধ্যমে।

সংকীর্ণতা এবং প্রতিহিসার রাজনীতির বলয় থেকে বেরিয়ে এসে মসৃণ গণতান্ত্রিক পথ চলা নিশ্চিত করতে এবং দেশ গড়বার লক্ষ্যে সার্বজনীন অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি কার্যকরী সংসদ গড়ে তুলতে পরমতসহিষ্ণুতা এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় সরকার দিতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশাবাদী।

নোটঃ এই লেখাটি ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে ড্রাফট করা।  এর পরবর্তীকালের ঘটনাগুলো, যেমন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন বা দল হিসেবে ইসলামী আন্দোলন (চরমোনাই) এর উত্থান ইত্যাদি এখানে প্রতিফলিত হয়নি।  


“বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিঃ বাস্তবতা ও একটি সাংবিধানিক ব্যবচ্ছেদ” তে 4 টি মতামত

  1. আমান এভাটার

    সুন্দর লেখা। আসলে ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করার চাইতে নির্দিষ্ট এক বা একাধিক কিছু দল নিষিদ্ধ করার দাবিই সব সময় মূখ্য ছিল। একটা ব্যাপার লক্ষনীয়, কোন দলের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ/বন্ধ করার যেসব কারণ আইনে বলা আছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার বিরোধিতা করার কথা উল্লেখ নাই। সেই গ্রাউন্ডে কোন দলকে নিষিদ্ধ করলে তা রাজনৈতিকভাবে যেকোন সরকারের জন্য বেশি সুবিধাজনক হতো। ৩৮ অনুচ্ছেদে আছে “তার গঠন এবং উদ্দেশ্য এ সংবিধানের পরিপন্থী হয়”। এখানে কোন নির্দিষ্ট কর্মসূচী বা ক্যাম্পেইনের কথা অন্তর্ভুক্ত নেই।
    ১৯৭২ এর সংবিধানের ৩৮ এর প্রোভাইজো প্রদত্ত ক্ষমতা বলে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ২০ ধারা সব সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়া নিষিদ্ধ করে। এই ধারা অনুযায়ী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে এরূপ যেকোন দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে, যেমন হিজবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই ধারার বৈধতা ৫ম সংশোধনীর কারণে প্রশ্নবিদ্ধ থাকলেও ১৫তম সংশোধনীর পর আবার মোটামুটি আগের মত বহাল হয়েছে। মানে কোন ধর্মভিত্তিক দলকে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে নিষিদ্ধ করতে সংসদে বিল আনারও প্রয়োজন নেই। তবে ৩৮ অনুচ্ছেদে যেহেতু ‘যুক্তিসঙ্গত বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে’ বলা আছে, তাই উক্ত প্রজ্ঞাপন/বিলকে রিট পিটিশনের বাধা ডিঙ্গাতে হবে।
    ১২ অনুচ্ছেদ কিন্তু ফান্ডামেন্টাল প্রিন্সিপলস-এর মধ্যে পড়ে, খিয়াল কইরা! মৌলিক অধিকারের সাথে বিরোধ দেখাতে পারলে চ্যালেঞ্জে টিকবে না।
    আইসিটি এক্ট ১৯৭৩-এ ২০১৩ সালে সংশোধনী করে কোন সংস্থার বিচার করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন সংস্থার বিপক্ষে চার্জশিট প্রদান করা হয় নি, হবে বলেও মনে হয় না। দেখা যাক!

    Like

    1. Shyikh Mahdi এভাটার

      ধন্যবাদ ভাই !!!

      Like

  2. zahid এভাটার

    সত্যি অসাধারণ লিখেছেন। পড়ে ভালো লাগল ভাই। আরও লিখবেন আশা করি।ধন্যবাদ
    বাংলাদেশের খেলা

    Like

    1. Shyikh Mahdi এভাটার

      পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই 🙂

      Like

আমান এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.